Header Ads

Header ADS

মুসলিম ঐক্যে ভিন্ন ভিন্ন আকিদার প্রভাব; শিয়া-সুন্নীর ঐক্য: ইসরায়েলের আসন্ন পরাজয়

 


মুসলিম ঐক্যে ভিন্ন ভিন্ন আকিদার প্রভাব; শিয়া-সুন্নীর ঐক্য: ইসরায়েলের আসন্ন পরাজয়

ইসলামিক আকিদা কি?

আকিদার এরাবিক রূপ عَقِيدَة যার ধাতু  ع ق د আরবি তিনটি অক্ষর নিয়ে গঠিত। এটির উচ্চারণ হলো আকদ।

আরবি ডিকশনারি মতে এই আকদ এর বাংলা অর্থ গীট মানে শক্ত করে কোনো কিছুকে বাধা। আমাদের বিয়ে শাদীতে সকল অনুষ্ঠানের আগে আকদ সম্পন্ন করা হয়। মানে একজন পুরুষ একজন নারীকে বিয়ের শক্ত বন্ধনে বাঁধা হয় যার নাম আকদ। তবে এই আকদ শব্দের আরো কিছু মানে আছে।  islamqa.info এর মতে আকদ শব্দের অর্থ নিশ্চিতকরণ। এই ওয়েবসাইটের মতে আকদ বলতে দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে ইসলামের সকল বিশ্বাসকে শক্তভাবে মেনে চলায় নিশ্চিতকরণ বোঝায়।

দিক থেকে, ইসলামিক আকিদা বলতে ইসলামের বিশ্বাস গুলোকে দৃঢ়চিত্তভাবে জীবনে বাস্তনায়নের নিশ্চিতকরণ বোঝায়। মানে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোতে ঈমান এনে ঈমানের মৌলিক বিষয়গুলোকে যে আমি মেনে নিলাম এবং আমার জীবনে দৃঢ়ভাবে বাস্তবায়নের   ব্যাপারটিকে নিশ্চিতকরণকে বোঝায়।

https://en.wikipedia.org/wiki/Aqidah#:~:text=Aqidah%20(Arabic%3A%20%D8%B9%D9%8E%D9%82%D9%90%D9%8A%D8%AF%D9%8E%D8%A9%2C%20romanized,Islamic%20creed%20or%20Islamic%20theology.

তবে একটা কথা আগেই বলে রাখা ভালো যে আকিদা শব্দটির উল্লেখ কোরান বা হাদিসের কোথাও নেই। তার মানে এই দাঁড়ায় যে আকিদার বিষয়টির ধারণা ধর্মীয় পন্ডিতগণ হতে উদ্ভাবিত। তবে ঈমান আমলকে সঠিক গুনবাচক করা যে আকিদা ধারণার সৃষ্টি   আলোচনার উদ্দেশ্য, এতে আমাদের মনে কোনো সন্দেহ নেই।

উইকিপেডিয়া org এর মতে - আকিদা বলতে একটি ধর্ম মতকে বোঝায় যা ধর্ম বিশ্বাসের সংক্ষিপ্ত  বিবৃতির চাইতে অনেক গভীর স্তরের বিশ্বাস এবং যা সাধারণ মুসলিমদের পালিত বিধানাবলীর অংশ নহে।

ঈমান ও আকিদার সম্পর্ক 

সাধারণভাবে আকিদা হলো ঈমানএর সম্প্রসারিত বিষয়াবলী যেখানে ঈমানকে ব্যাখ্যা করতে কোরান হাদিসের আলোকে বান্দার নিজস্ব বিবেচনা উপলব্ধিকেও প্রয়োগ  করা যায়। তার মানে হলো আকিদা দ্বারা ঈমানের ব্যাখ্যাকে  বোঝায় যা ব্যাখ্যাকারী কোরান হাদিসের আলোকে যেরকমভাবে মনে করে, সেভাবেই তিনি ব্যাখ্যা করতে পারেন। আকিদা আলোচনার আসল উদ্দেশ্য হলো বান্দার মনে ঈমানের শক্তিকে আরো শক্তিশালী করা।

যেহেতু ঈমানের বিষয়গুলোকে আকিদার দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয় এবং ব্যাখ্যাকারী ঈমানের সঠিক সহজ ব্যাক্ষাকরার মানসে তার নিজস্ব চিন্তাধারা, দর্শন   অনুভূতি প্রয়োগ করেন, সেহেতু ব্যাখ্যাকারীদের সকল ব্যাখ্যা এক রকম হয় না। একজনের ব্যাখ্যা একেক রকম হয়।  আর কারণেই ভিন্ন ভিন্ন আকিদার কারণে  ইসলাম ধর্মে বিভিন্ন ধর্মমতের সৃষ্টি হয়েছে। এই ধর্মমতকে ইংরেজিতে creed বা থিওলজি বলে। ভিন্ন ভিন্ন ধর্মমতের কারণে ইসলামে ভিন্ন ভিন্ন দল উপদলের সৃষ্টি হয়েছে।

আকিদার আলোচ্য বিষয়

ইসলাম ধর্মের প্রধান প্রধান আকিদাগুলো কি কি

ভিন্ন ভিন্ন আকিদায় বিশ্বাসের কারণে ইসলাম ধর্মে কি কি দল উপদল সৃষ্টি হয়েছে

আকিদার ভিন্ন ভিন্ন ধারণার কারণে সৃষ্ট নানান দল উপদল সৃষ্টি ইসলামের ঐক্যে ক্ষতি করেছে? নাকি উপকার করেছে।

আকিদার ভিন্নতা আকিদা নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হওয়া মুসলিম উম্মার জন্য কতটুকু ক্ষতি বা উপকার বয়ে এনেছে ।

মুসলিম উম্মার স্বার্থে আমাদের আকিদাগত ভিন্নতাকে আমরা কিভাবে কমিয়ে আনতে পারি।

আকিদার প্রশ্নে ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য কারা  সবচাইতে বেশি ভূমিকা রাখতে পারেন।

আকিদার উপাদান সমূহ

আকিদা হলো ঈমান বিশ্লেষণকারী কতিপয় মৌলিক বিশ্বাসের সম্মক উপলব্ধি - যেগুলো আত্মস্থ করতে পারলে আমরা আমাদের আমলগুলোকেও সঠিকভাবে পালন করতে পারি। আর এই সমন্বিত বিশ্বাসগুলো আমাদেরকে পরিপূর্ণ একজন মুসলিম হতে সাহার্য করবে। এদিক থেকে আকিদা সম্মন্ধে আমাদের প্রচুর প্রচুর আলোচনা প্রয়োজন।

প্রথমেই আসি, আকিদার প্রধান প্রধান উপাদানগুলো কি কি। অর্থাৎ, ঈমানের মৌলিক বিষয়গুলো কি কি।

ইসলামে বিশেষ করে সুন্নি মতবাদে আকিদার প্রধান ছয়টি উপাদান রয়েছে। এক আল্লাহ তে বিশ্বাস আনা, ফেরেস্তাদের উপর বিশ্বাস আনা, কোরানের উপর বিশ্বাস আনা, সকল নবী রসূলদের উপর বিশ্বাস আনা, শেষ বিচার দিবস ও পুনর্জীবিত হওয়ার উপর বিশ্বাস আনা, এবং আমাদের ভাগ্য যে পূর্বনির্ধারিত, তার উপর বিশ্বাস আনা।

আকিদার উপাদানগুলোতে পবিত্র কোরানের স্বীকৃতি 

পবিত্র কোরানের সূরা বাকারার আয়াত নম্বর ৯৮, ১৭৭, ২৮৫, ও সূরা আন- নিসার ১৩৬ নম্বর আয়াতের আলোকে ঈমানের এই ছয়টি উপাদানের প্রথম পাঁচটি কোরান দ্বারা প্রমাণিত। তবে ষষ্ঠ নম্বর অর্থাৎ তকদির বা আমাদের ভাগ্য যে পূর্বনির্ধারিত, তা নিয়ে ইসলামিক চিন্তাবিদদের মধ্যেই বিতর্ক রয়েছে। এই ব্যাপারটি আমরা পরবর্তী কোনো এক ভিডিওতে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ । যদিও আমাদের ভাগ্য যে পূর্বনির্ধারিত, এটি পবিত্র কোরানের সূরা ফাতির আয়াত নম্বর ১১ এবং সূরা ইয়াসিন আয়াত নম্বর ১২ তে লিপিবদ্ধ রয়েছে।

35:11 وَاللَّهُ خَلَقَكُمْ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُطْفَةٍ ثُمَّ جَعَلَكُمْ أَزْوَاجًا ۚ

وَمَا تَحْمِلُ مِنْ أُنْثَىٰ وَلَا تَضَعُ إِلَّا بِعِلْمِهِ

 ۚ

 

 وَمَا يُعَمَّرُ مِنْ مُعَمَّرٍ وَلَا يُنْقَصُ مِنْ عُمُرِهِ إِلَّا فِي كِتَابٍ

 

 ۚ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ

 

আল্লাহ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর বীর্য থেকে, তারপর করেছেন তোমাদেরকে যুগল। কোন নারী গর্ভধারণ করে না এবং সন্তান প্রসব করে না; কিন্তু তাঁর জ্ঞাতসারে। কোন বয়স্ক ব্যক্তি বয়স পায় না। এবং তার বয়স হ্রাস পায় না; কিন্তু তা লিখিত আছে কিতাবে। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।

36:12 إِنَّا نَحْنُ نُحْيِي الْمَوْتَىٰ وَنَكْتُبُ مَا قَدَّمُوا وَآثَارَهُمْ ۚ وَكُلَّ شَيْءٍ أَحْصَيْنَاهُ فِي إِمَامٍ مُبِينٍ

 

আমিই মৃতদেরকে জীবিত করি এবং তাদের কর্ম কীর্তিসমূহ লিপিবদ্ধ করি। আমি প্রত্যেক বস্তু স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত রেখেছি।

এখানে স্পষ্ট কিতাব বলতে লৌহে মাহফুজকে বোঝানো হয়েছে।   

 

 

 

 

 

তবে যেহেতু, আল্লাহ্পাক আমাদের অতীত, বর্তমান, ও ভবিষ্যত সম্মন্ধে সব কিছুই জানেন, আমরা মেনে নিতে পারি আমাদের ভাগ্য পূর্বনির্ধারিত। আমাদের ভাগ্য যে পূর্ব নির্ধারিত, এই ব্যাপারটির সমর্থনে পবিত্র কোরানে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। যেমন,

সূরা আল-ইনসান (৭৬:৩০)

সূরা আল-কামার (৫৪:৪৯)

সূরা আত-তাওবা (:৫১)

সূরা আল-আহযাব (৩৩:৩৮)

সূরা আল-হাদীদ (৫৭:২২)

এই আয়াতগুলো  বাংলা অর্থসহ ভিডিওটির শেষের দিকে শুনবো।  

শিয়া সুন্নিদের আকিদাগত ভিন্নতা

তবে শিয়া সুন্নি উভয় মতবাদে ইসলামে  ছয়টি মৌলিক বিশ্বাস  রয়েছে। যেমন, তৌহিদ মানে আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় এটা মানা, ঈমান, নামাজ, রোজা, জাকাত ও হজ। এই ছয়টি বিশ্বাসকে আকিদার মৌলিক বিষয় হিসেবে মানা হয়। তবে আরো কিছু মতবাদ রয়েছে যারা মনে করেন - এই ছয়টি বিষয়ের সাথে আরো কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো না মানলে পরিপূর্ণ মুসলিম হওয়া যাবে না। যেমন, জিহাদ বা ইসলাম প্রতিষ্ঠ করতে যুদ্ধ করা এবং অমুসলিমদের কাছে  ইসলামের দাওয়াত দেয়া বা ইসলাম প্রচার করা বা ইসলামের বাণী পৌঁছে দেয়া । কিছু কিছু দল উপদল এমন যে আপনি যদি জিহাদ না করেন বা ইসলামের দাওয়াতী কর্মে অংশগ্রহণ না করেন, তাহলে আপনি পরিপূর্ণ মুসলিম নন। 

আকিদায় ভিন্নতার কারণে মুসলিম জাহানের বিভক্তি

আকিদায় ভিন্নতার কারণে ইসলামে অনেক মতবাদের উৎপত্তি হয়েছে যেমন কালাম (kalam), মোতাজিলীস (Motajilis), আশারিস (asharis), মাতুরিদীস (Maturidis), আথারই (Athari), ইত্যাদি। মূলত যে সকল ব্যাক্তি বা ধর্মীয় পন্ডিত এই মতবাদের সৃষ্টি করেছেন, তার নামের সাথে মিল রেখে বেশির ভাগ মতবাদের নামকরণ করা হয়েছে। উপরে উল্লেখিত দল উপদল গুলো সুন্নি এবং শিয়া মতবাদের কোনো কোনোটির ধারক বটে। এই ব্যাপারগুলোকে ইংরেজিতে স্কুল অফ থটস বলে - যেগুলো আমরা পরবর্তী কোনো এক ভিডিওতে বিস্তারিত আলোচনা করবো - ইনশাল্লাহ।

 

আকিদায় ভিন্ন ভিন্ন ধারণার কারণে সৃষ্ট নানান দল উপদল সৃষ্টি ইসলামের ঐক্যে ক্ষতি করেছে কি?

আকিদা হলো ইসলামের মূল ভিত্তি বা বিশ্বাসগুলোর সম্মক ধারণা   আমলের বিষয়। যেহেতু কোরান হাদিসে আকিদার নাম দিয়ে কোনো বিবরণ নেই, সেহেতু ভিন্ন ভিন্ন ব্যাক্তি ভিন্ন ভিন্নভাবে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। শুধু তাই নয়, আকিদার উপাদানগুলোর কয়েকটিতে দল উপদলগুলোর মতানৈক্য না থাকলেও কিছু কিছু বিষয়ে কোনো কোনো দলের বা উপদলের মতভেদ রয়েছে। আমরা আগেই বলেছি, কোনো কোনো দল বা উপদল মনে করে যে - কোরানের জেহাদের আদেশটি এখনো রোহিত হয়ে যায়নি। আকিদার রকম আরো আরো অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলোতে ইসলামিক মতবাদের বিস্তর বেমিল রয়েছে। আকিদায় আকিদায় মতভেদের কারণে ঈমান আমলে মুসলিম সমাজে ধর্ম রীতি পালনের ভিন্নতা এসেছে এমনকি সমাজে বিভক্তিরও সৃষ্টি হয়েছে। ভিন্ন আকিদায় বিস্বাসী মুসলিমদের আমলে ভিন্নতার কারণে সামাজিক নিয়ম, সংস্কৃতি, আমল ধর্মীয় শিক্ষায় দল উপদলগুলোর মিথস্ক্রিয়ায় দল উপদলগুলোর মধ্যে বিভেদেরও সৃষ্টি হয়েছে এবং পরিণামে মুসলিম ভ্রাতৃত্বে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। সারা দুনিয়ায় মুসলিম সম্প্রদায় বিভিন্ন দলে উপদলে ভাগ হয়ে যাওয়ার কারণে বিশ্ব মুসলিমের উম্মার শক্তিগুলোও ভাগ হতে হতে কমজোর দল-উপদলে পরিণত হয়ে পড়েছে। ফলে, কোনো কারণে অন্য ধর্মের কোনো গোষ্ঠী বা দেশের সাথে একটি মুসলিম দেশের বিরোধ যুদ্ধে রূপান্তরিত হলে মুসলিম দেশগুলো আর এক হতে পারে না। ফলে মুসলিম দেশগুলোর প্রাধান্যতা বা প্রভাব নিষ্প্রভ হয়ে যায় এবং অমুসলিম দেশগুলো প্রভাবশালী হয়ে পড়ে ।

শুধু কি তাই, এই আকিদা নিয়ে কোনো একটি ইসলামিক দেশের মুসলিমরা কয়েকভাগে ভাগ হয়ে যায়। একেক দল বা উপদল একেকভাগে তাদের ধর্মীয় রীতি নীতি পালন করে থাকে। ভিন্ন রীতি আবার ভিন্ন কৃষ্টি সংস্কৃতির জন্ম দেয়। যেমন মুসলিম কুর্দিরা ধার্মিক হলেও নাচ গানকে হারাম মনে করেন না যা বেশিরভাগ মুসলিম সম্প্রদায় হারাম কর্ম বলে পরিগণিত হয়।  ফলে ভিন্ন ভিন্ন রীতির মুসলিম সমাজে  সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় নানান রকম বিভেদ ফাসাদের সৃষ্টি হয়। এমনকি কোনো একটি নির্দিষ্ট দেশে ধর্মীয় দল উপদলগুলোর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ এমনকি যুদ্ধও বেঁধে যায়। উদাহরণস্বরূপ, শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব নিয়ে 1988, 2005, 2014, 2015, 2018 সালে  কয়েকটি দেশের হত্যা-গণহত্যার ঘটনাগুলো আমাদের সবারই জানা। এ সমস্ত হত্যা গণহত্যার সাথে শুধু যে আকিদার ভিন্নতায় দায়ী, তাও আমরা বলবো না। ব্যাক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থও এ সকল ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ছিল।

আকিদার বিশ্বাস ও আমলের পূর্ণতা

যদিও কোরান হাদিসের কোথাও আকিদার উল্লেখ করে কোনো বিবরণ আসেনি, তথাপি ইসলামিক চিন্তাবিদের মতে ঈমান আকিদার পূর্ণ ধারণা না থাকলে আমলেও পূর্ণতা আসে না। কারণে আকিদার উপরে সব মাজহাবে বা দল উপদলে অনেক গুরুত্ব আরোপ করা হয়। আমি যে আমল করি, সে আমলটি গ্রহণ করার ক্ষমতা আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালার থাকলেও আমাদের আকিদায় বিশেষজ্ঞ আলেমরা অনেকেই ফতুয়া দিয়ে বসেন যে আপনার আকিদা ঠিক না থাকলে আপনার এবাদত কবুল হবে না। আবার কোনো একটি বিশেষ দলের আকিদার উপরে সন্দেহ করে আর একটি বিশেষ দল মনে করেন যে - ওই বিশেষ আকিদার বিশ্বাসী হওয়ার কারণে ওই বিশেষ দলটি ঈমান হারা হয়ে পড়েছে। আর ঈমান হারা হয় পড়েছে বলে তারা আর মুসলিম নেই। ধরণের প্রেক্ষাপটে এক দল আরেক দলকে কাফের বলে ফতুয়া জারি করেন। এই অনাকাঙ্খিত ব্যাপারটি মুসলিম উম্মার অনেক ক্ষতি সাধন করে থাকে।

আকিদা ও বাংলাদেশের আলেম সমাজ

আকিদা নিয়ে আমাদের দেশেও আলেম সমাজে অনেক সময়ে মতভেদের সৃষ্টি হয়। উদাহরণ স্বরূপ, কোনো এক আলেম একটি মাহফিলে নবীজির শরীরের কোনো একটি বিশেষ বৈশিষ্ট সম্মন্ধে বক্তব্য দেন যা আর একজন আলেমের পছন্দ হয়নি। নিয়ে না পছন্দকারী আলেম ওই আলেমকে কাফির বলে ফতুয়া দেন। এটিতো একটি মাত্র উদাহরণ। খুঁজলে এরকম কাফির ফতুয়াবাজির আরো  অনেক উদাহরণ আমাদের আলেমদের মধ্যে পেয়ে যাবেন যা মুসলিম ঐক্য বা ইসলামিক উম্মার পথে একটি বড় মাপের অন্তরায়।

ইসলামের আকিদা ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ 

মুসলিম উম্মাহ রক্ষা করতে হলে আমাদের আকিদাগত বিশ্বাসে সমঝোতায় আসতে হবে। আমাদের মৌলিক বিশ্বাসগুলোর প্রতিটিতেই আমরা সকল দল উপদলগুলো সহমত পোষণ করি। তবে দু একটি বিশ্বাসে আমাদের শিয়া সুন্নি আহলে সুন্নাত, সালাফি ইত্যাদি উপদলগুলোর মধ্যে মতভেদ থাকতেই পারে। আমরা যদি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুল্লাহ - এই বিশ্বাসটিকে আমাদের বিশ্বাসের মূল ভিত্তি হিসেবে ধরে নেই, তাহলে আমাদের মধ্যে মতানৈক্য অনেক কমে আসবে। আকিদার সকল বিশ্বাসকে যদি আমরা এই কালিমাটি দিয়ে ছেঁকে নেই, তাহলে আমাদের গোড়ামি প্রসূত বিভেদ আর থাকবে না। যে আকিদা আমাদের মুসলিমদের মধ্যে বিভেদের জন্ম দেয়, সে আকিদাকে আমরা প্রত্যাখ্যান করবো। আলেম সমাজের কাছে আমাদের এটাই অনুরোধ যে ওই আকীদাগুলোকে আমাদের সামনে উপস্থাপন করুন যেগুলো আমাদের মুসলিম উম্মার সহায়ক হবে।

আকিদাগত ভিন্নতা ও ফিলিস্তিনিদের বঞ্চনা 

আর একটি উদাহরণ আমি আপনাদেরকে জানাবো যেটি ঈমানদার মোমিনদের মনে বড় আঘাত দিয়েছে। গত সাতই  অক্টোবর ২০২৩ তারিখে ফিলিস্তিনের হামাস যখন ইসরায়েলে আক্রমণ করে এবং ইসরায়েলের সাথে ফিলিস্তিনিদের যুদ্ধ বেঁধে যায়, তখন আমাদের আলেম সমাজের কেউ কেউ এমনও মন্তব্য করেন যে এই ফিলিস্তিনিদের আকিদা ভালো নয় বা এই ফিলিস্তিনিরা ভ্রান্ত আকিদার মধ্যে আছে। সুতরাং, (তাদের মতে) ভুল আকিদায় বিশ্বাসী হামাস বা ফিলিস্তিনিদের সমর্থন দেয়া আমাদের উচিত হবে না। অথচ ফিলিস্তিনিরা সুন্নি মুসলিম এবং আমরা বাংলাদেশীরাও সুন্নি মুসলিম। এটা ঠিক নয়। আমাদের দেশের আলেমরা শিয়াদেরকে মুসলমান বলেও বিশ্বাস করতে চান না। কারণ শিয়ারা হজরত আবু বকর হজরত ওমর সহ বেশিরভাগ সাহাবীদের নাকি কাফের বলে। অথচ, ওই শিয়ারা ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইস্রারায়েলীদের সাথে যুদ্ধ করছে। ইয়েমেন একটি শিয়া অধ্যুষিত দেশ। ইয়েমেনের হুথিরা ফিলিস্তিনিদের সাহার্যে ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধ করছে। লেবাননের হেজবুল্লাহ এরাও শিয়া, তারাও ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ইসরায়েলিদের সাথে যুদ্ধ করছে। ইরান একটি শিয়া মুসলিমদের দেশ। অর্থ অস্ত্র দিয়ে তারা হুথি, হেজবুল্লাহ হামাসকে ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধ করতে হাত বাড়িয়ে ফিলিস্তিনিদের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠায় সাহার্য করছে। এটিতো ইসলামিক ভ্রাতৃত্বের নমুনা। কেন আমরা এটিকে অস্বীকার করি? ফিলিস্তিনীরাতো আমাদের ভাই। ইরানের এহেন উদ্যোগ সাহার্য ইসলামিমিক ভ্রাতৃতিত্ববোধকে জাগ্রত করেছে।

আকিদাগত ভিন্নতা ও প্রেসিডেন্ট রাইসির বঞ্চনা 

তবে আফসোসের ব্যাপার হলো এই যে কিছুদিন আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি হেলিকোপটার দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। আমাদের কিছু কিছু আলেম ফতুয়া জারি করেন যে ওই কাফেরের জন্য দোআ করা যাবে না। অথচ আমরা সাধারণ মানুষ এবং এমনকি আলেমদের অনেকেই জানি যে ইব্রাহিম রাইসি একজন কামেল ঈমানদার ধার্মিক ব্যাক্তি ছিলেন - যিনি ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ইসরায়েলিদের সাথে যুদ্ধে হামাস, হুতি ও হিজবুল্লাহকে সাহার্যের ঘোর সমর্থক ছিলেন। আমাদের ভ্রান্ত আকিদার আলেমরা যাই বলুন, আমরা তার জন্য মহান আল্লাহ্পাকের দরবারে প্রার্থনা করি - হে আল্লাহ পরওয়ারদেগার, আমাদের মুসলিম ভাই ইব্রাহিম রাইসিকে তুমি জান্নাতুল ফেরদৌস দান করো। আকিদাকে কেন্দ্র করে আমাদের আলেমরা আহলে সুন্নাত, আহলে কোরান, আহলে জামাত, সালাফি, ইত্যাদি ভাগে বিভক্ত হয়ে আমাদের মুসলিম উম্মাকে খন্ড খন্ড করে দিয়েছে।  থাকেন আপনারা আপনাদের গোষ্ঠী নিয়ে। আমরা কোনো দলেই যাবো না। কারণ আমরা মনে করি, ইসলামে কোনো দল উপদল নেই। আমরা সবাই মুসলিম। এটাই আমাদের পরিচয়।

মুসলিম উম্মাহর মূল মন্ত্র

পবিত্র কোরানের অনেক স্থানেই আল্লাহ্পাক বলেছেন, যারা ঈমান আনবে এবং নেক কাজ করবে, তারাই সফল হবে। লা ইলাহা ইল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলাল্লাহ - এই বিশ্বাসে যারা বিশ্বাস করেন, তারাই ঈমানদার। আর দ্বিতীয়টি তো আল্লাহ্পাকের এখতিয়ারে। কেউ যদি আল্লাহ পাকের পছন্দ অনুযায়ী নেক কাজ করতে সামর্থ না হন, আল্লাহপাক তো তাকে ক্ষমা করেও দিতে পারেন। কারুর অধিকার নেই যে কাউকে বলবেন,  নেক কাজ না করার জন্য আপনি দোজখে যাবেন। আমলের  কারণে কে দোজখে যাবেন, বা কে বেহেস্তে যাবেন, এটাতো আল্লাহপাকই নির্ধারণ করবেন।

মুসলিম উম্মার বিভক্তিতে মুনাফিক মুসলিম দেশের ভূমিকা    

আরো দুঃখ লাগে কি জানেন? ফিলিস্তিনের আশপাশের যে সুন্নি দেশগুলি রয়েছে, তারা ফিলিস্তিনিদের সাথে মুনাফিকী করছে। ফিলিস্তিনকে না দিয়েছে কোনো অস্ত্র, না দিয়েছে অর্থ বা খাদ্য। বরং তারা গোপনে গোপনে ইসরায়েলের সাথে আঁতাত করে ফিলিস্তিনিদের বিপক্ষে কাজ করেছে। ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে হুতি ও ইরানের ছোড়া মিসাইলকে প্রতিহত করে আমাদের কয়েকটি মোনাফিক সুন্নি দেশ ইসরায়েলকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।

ইসরায়েলিদের আসন্ন পরাজয়ের লক্ষণ 

তবে যাই বলুন। ওই যে পবিত্র কোরানের সূরা ইস্রার ১৬ নম্বর আয়াতের প্রতিফল অনুযায়ী আমরা মনে আমাদের মনে করার সময় হয়তো এসে গেছে যে, আমরা অচিরেই  আল্লাহপাকের অনুগ্রহ পেতে যাচ্ছি। আল্লাহ্পাক বলেন, 

আজ ৫ জুন - আর এ পর্যন্ত ইসরায়েল বিনা কারণে 37 হাজার গাজাবাসীকে হত্যা করেছে। জাতিসংঘ এই হত্যা যজ্ঞকে গণহত্যা বলে অভিহিত করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রুল জারি করেছে। আমাদের সুন্নি মুনাফিক দেশগুলো এগিয়ে না আসলেও আল্লাহ্পাক বহু দেশের সমর্থন ফিলিস্তিনের পক্ষে দিয়ে দিয়েছেন। এ পর্যন্ত জাতিসংঘের ১৯৩ টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৪৩ দেশ ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এমনকি  ইসরায়েল-আমেরিকার দোসর ইউরোপের ৩টি খ্রিস্টান দেশও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হয়, আল্লাহ্পাক সূরা ইসরায়েলের ১৬ নম্বর আয়াতের ফলাফল কার্যকর করে ফিলিস্তিনি ভাই বোনদের প্রতি তার রহমতের হাত এগিয়ে দেবেন, ইনশাআল্লাহ। 

মুসলিম উম্মাহ সংরক্ষণে আলেম সমাজের করণীয়

কোনো পন্থার সঠিকতা নিয়ে নবীজির জীবদ্দশাতেই অনেক বিতর্ক উলথিত হয়েছিল, যেগুলো নবীজি মীমাংসা করে দিয়েছেন। এখন নবীজি আর বেঁচে নেই - আর হুজুররাই নবীজির দায়িত্ব পেয়েছেন বলে তারা প্রচার করেন। আমরাও ইটা মেনে নেই যে - যেসকল বিষয়ে আমরা বুঝবোনা বা আমাদের জ্ঞান সীমিত রয়েছে, সেগুলো আমরা হুজুরদের কাছ থেকে জেনে নেবো। কারণ আমরা নই, হুজুররা ওই বিষয়ে অভিজ্ঞ। দেখুন আমার বা আমাদের মনের এই ভাব প্রকাশ করে আমরা হুজুর বা হুজুরদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও সন্মান নিবেদন করছি। হুজুরদেরকেও নিজেদেরকে সংযত রাখতে হবে। হুজুরদের এমন কোনো কাজ করা উচিত হবে না - যা তাদের উপর আমাদের বিশ্বাসকে দুর্বল করে দেয়। মুসলিম ঐক্যকে সংহত রাখার প্রধান দায়িত্ব হুজুরদেরই। সে কারণে যে লোকটি ভুল করে বা হুজুরদেড় ভাষায় ভুল আকিদার মধ্যে আছেন, তাকে দাওয়াতী কার্যক্রমের মাদ্ধমে সঠিক স্থানে নিয়ে আসতে হবে। 

নবীজি বলেছেন, দাওয়াত দাও হেকমতের সাথে। কথাটি হুজুররা আমাদের চাইতে ভালো জানেন। শুধু প্রয়োজন ধৈর্যের সাথে কৌশলী হয়ে দাওয়াত দেয়া বা ভুল পথে থাকা মানুষকে সংশোধন করা । 


Related Video



আকিদা প্রাসঙ্গিক পবিত্র কোরানের কিছু আয়াত  

সূরা আল-ইনসান (৭৬:৩০)

76:30 وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا

আল্লাহর অভিপ্রায় ব্যতিরেকে তোমরা অন্য কোন অভিপ্রায় পোষণ করবে না। আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।

 

সূরা আল-কামার (৫৪:৪৯)

54:49 إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ

আমি প্রত্যেক বস্তুকে পরিমিতরূপে সৃষ্টি করেছি।

 

 

সূরা আত-তাওবা (:৫১)

9:51 قُلْ لَنْ يُصِيبَنَا إِلَّا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَنَا هُوَ مَوْلَانَا ۚ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ

আপনি বলুন, আমাদের কাছে কিছুই পৌঁছবে না, কিন্তু যা আল্লাহ আমাদের জন্য রেখেছেন; তিনি আমাদের কার্যনির্বাহক। আল্লাহর উপরই মুমিনদের ভরসা করা উচিত।

 

সূরা আল-আহযাব (৩৩:৩৮)

1.     33:38 مَا كَانَ عَلَى النَّبِيِّ مِنْ حَرَجٍ فِيمَا فَرَضَ اللَّهُ لَهُ ۖ سُنَّةَ اللَّهِ فِي الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلُ ۚ وَكَانَ أَمْرُ اللَّهِ قَدَرًا مَقْدُورًا

আল্লাহ নবীর জন্যে যা নির্ধারণ করেন, তাতে তাঁর কোন বাধা নেই পূর্ববর্তী নবীগণের ক্ষেত্রে এটাই ছিল আল্লাহর চিরাচরিত বিধান। আল্লাহর আদেশ নির্ধারিত, অবধারিত।

2.     

 

সূরা আল-হাদীদ (৫৭:২২)

57:22 مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي أَنْفُسِكُمْ إِلَّا فِي كِتَابٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ نَبْرَأَهَا ۚ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ

পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর কোন বিপদ আসে না; কিন্তু তা জগত সৃষ্টির পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।

 

আকিদা প্রাসঙ্গিক শব্দগুচ্ছ

What is the correct aqidah?

What is the role of the aqidah?

What is Aqaaid in Islam?

ইসলামে আকায়েদ কি?

What Is 'Aqeedah? - Islam Question & Answer

Aqidah,

আকায়েদ,

Aqeedah,

What is Aqaaid in Islam,

ইসলামে আকায়েদ কি,

Aqidah meaning in Islam,

What does aqidah mean in Islam,

What Quran says about Aqidah,

What is the correct Aqidah,

ইসলামী আকীদা,

 ঈমান আকিদা শুদ্ধ করুন 
Aqidah -Theology - Madina Institute Muslim chaplain course
Aqidah meaning in Islam
 
Aqidah Islam PDF
 
Aqidah meaning in English
 
Aqidah meaning in Urdu
 
Importance of Aqeedah in Islam
 
Types of Aqeedah in Islam
 
Aqidah Maturidiyah
 
Aqidah Asy ari
 


No comments

Powered by Blogger.