হুজুর কেন পয়সা নেয়?
.jpg)
হুজুর কেন পয়সা নেয়?
এ নিবন্ধে যা যা থাকবে
হুজুর কারা
হুজররা কি কি করেন
হুজুররা কিভাবে পয়সা উপার্জন করেন
হুজুরদের উপার্জন হালাল কিনা
হুজুরদের উপার্জন সম্পর্কে কোরান হাদিস কি বলে
এবং সব শেষে হুজুরদেরকে কিভাবে পয়সা দিলে জায়েজ হবে, তা আলোচনা করবো
আসুন এবার আলোচনা শুরু করা যাক
প্রথমে জেনে নেই হুজুর কারা
আরবি শব্দ হুদুর (حُضُور) থেকে হুজুর শব্দের উৎপত্তি। হুজুরের আভিধানিক অর্থ হলো আমার প্রভু। কলিন্স ডিকশনারির মতে হুজুরের সংজ্ঞা বোঝাতে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন কোন ব্যাক্তিকে বোঝানো হয়েছে।
তবে আমাদের দেশে মাদ্রাসা পড়ুয়া কোনো শিক্ষার্থী তার শিক্ষককে হুজুর বলে সম্বোধন করেণ। আর মুসলিম ধর্মের আরবি শিক্ষিত যে সকল ব্যাক্তি সর্ব সাধারণ মুসলিমের ধর্মীয় কার্য্য পরিচালনা করেন, বা ধর্মীয় উপদেশ প্রদান করেন, এমন বাক্তিদেরকে হুজুর বলার প্রচলন আমাদের সমাজে রয়েছে। হুজুর শব্দটি সম্পর্কে আমার একটি ভিডিওতে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। ঐ ভিডিওতে আমি হুজুর ও স্যার শব্দ দুটিতে সামঞ্জস্যতা ও পার্থক্যের বিষয়াবলির উপস্থাপন করেছি। আগ্রহী দর্শক শ্রোতা ভিডিও ডেস্ক্রিপশনে দেয়া লিংকটিতে ক্লিক করে ভিডিওটি দেখে নিতে পারেন।
bit.ly/3B0GEmm
হুজুররা প্রধানত মক্তব-মাদ্রাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমাম ও ওয়াজ মাহফিলের বক্তব্য দানের মাধ্যমে তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
এ সকল দায়িত্ব পালন করতে তারা কেন পয়সা নেবেন? - তা নিয়ে আমাদের সমাজে হরেক রকম আলাপ আলোচনা ও সমালোচনা হয়ে থাকে। এক পক্ষ পবিত্র কোরানের সূরা বাকারার ৪১ নম্বর আয়াত টি তুলে বলেন যে, আল্লাহ পাক বলেছেন, বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
وَءَامِنُوا۟ بِمَآ أَنزَلْتُ مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَكُمْ وَلَا تَكُونُوٓا۟ أَوَّلَ كَافِرٍۭ بِهِۦ ۖ وَلَا تَشْتَرُوا۟ بِـَٔايَٰتِى ثَمَنًا قَلِيلًا وَإِيَّٰىَ فَٱتَّقُونِ
অর্থাৎ, আর ঈমান আনো ঐ কিতাবের প্রতি যাহা আমি নাজিল করিয়াছি এমনভাবে যে, উহা সত্যতা প্রমাণকারী ঐ কিতাবের যাহা তোমাদের সঙ্গে আছে, আর হইওনা তোমরা সকলের মধ্যে ঐ কোরানের সর্বপ্রথম অবিশ্বাসী, আর গ্রহণ করিও না - আমার আহকামের পরিবর্তে তুচ্ছ বিনিময় এবং আমাকে পূর্ণরূপে ভয় করো।
এ আয়াতের সূত্র ধরেই আমরা বলে থাকি যে হুজুররা ধর্মীয় কাজের সেবা দিয়ে যে অর্থ কামান, তা হালাল নয়। শুধু আমরা সাধারণ মুসলিমরাই নই, স্বয়ং হুজুরদের একটা গ্রূপই এ ফতুয়া দিয়ে থাকেন।
তবে কোরান শিক্ষা দিয়ে বা প্রচার করে অর্থ উপার্জন না করার তাকিদ দিয়ে অনেক হাদিস রয়েছে, যদিও আমাদের মধ্যে কেউ কেউ অনেক হাদিসের উপর আস্থা রাখি না। কারণ প্রচারিত হাদিসের মধ্যে নাকি অনেক হাদিস জাল রয়েছে। হুজুররাও তা স্বীকার করেন।
আজকের ভিডিওতে আমরা ইন্টারনেটে প্রকাশিত বিভিন্ন পন্ডিত ব্যাক্তিদের আলোচনা হতে দেখবো যে, আসলে কোরানিক সেবা প্রদান করে হুজুরদের পয়সা নেয়া বৈধ কিনা। আজকের ভিডিওতে উপস্থাপিত তথ্যসমূহের উৎসের লিংক ডেসক্রিপশন বক্সে দেয়া হলো।
bit.ly/3B0GEmm
এই নিবন্ধে, আমি আমার নিজের পক্ষ থেকে কোন উত্তর না দিয়ে শুধুমাত্র ইন্টারনেটে পাওয়া মতামত উল্লেখ করেছি। যদিও, কোনো একটা বিষয় সম্পর্কে অন্যের ধারণা সমূহ বর্ণনা করার সময়, নিজের ধারণাগুলিও অবচেতনভাবে প্রকাশিত হয়ে যায়। আশা করি এ বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
এবার আসুন জেনে নেই, হুজুরদের আয়ের উৎস কি কি ?
কিছুক্ষন আগেই আমরা জানলাম যে হুজুররা মক্তব-মাদ্রাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমাম ও ওয়াজ মাহফিলের বক্তব্য দানের মাধ্যমে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
মক্তবে প্রধানত কোরান শিক্ষা দেয়া হয় - যার বিনিময়ে হুজুররা হাদিয়া বা বেতন নিয়ে থাকেন। কোরান বা হাদিসে কোরান শিক্ষা দিয়ে বিনিময় না নেয়ার যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা এই মক্তবের হুজুরদের ক্ষেত্রে পুরোপুরি প্রযোজ্য।
কিন্তু একটা ব্যাপার আপনিকি ভেবে দেখেছেন কখনো যে - হুজুরদের মধ্যে এই মক্তবের হুজুররাই সবচাইতে গরিব! ধরুন কোরান ও হাদিসের নির্দেশমতে তাঁরা কোরান শিক্ষা দিয়ে কোনো পয়সা নিলেন না।
তাহলে প্রশ্ন হলো যে, খাবার, কাপড় চোপড়, ঔষধ পথ্য কেনার জন্য হুজুররা পয়সা পাবেন কোথায়? তাহলে আবার প্রশ্ন হলো, কোরান শিক্ষা দিয়ে পয়সা না নেয়ার, কোরান ও হাদিসের নির্দেশসমূহকি, এই হুজুরদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?
তবে এটা আমি মেনে নেবো যে বেশিরভাগ মক্তবের হুজুররা স্থানীয় মসজিদের ইমাম বা মোয়াজ্জিন হয়ে থাকেন। তারাতো মসজিদ হতে বেতন নেন, আবার এখানে কেন।
প্রিয় দর্শক শ্রোতা, মসজিদের ইমাম মোয়াজ্জিনদেরকে আমরা আর কত টাকা বেতন দেই? তাতে কি তাদের চলে ? তাদেরতো বৌ বাচ্চা আছে। আপনার আমার সাথে তুলনা করেই না হয় রায়টা দেবেন ?
মক্তব ও মসজিদের হুজুরদের কাজটা পুরোপুরি আমাদের সামাজিক কাজ। তাহলে তাদের সংসার চালানোর ব্যাপারটা ভাবার দায়িত্বও আমাদের উপর বর্তায়, আমরা যারা ঐ সমাজে বসবাস করি। তা নয় কি?
ইমাম মোয়াজ্জিনদের মতো - মাদ্রাসার শিক্ষকরাও মাসের শেষে বেতন নেন। মাদরাসায়ও কোরান হাদিস শিক্ষা দেয়া হয়। কোনো কোনো মতে এ হুজুরদের উপার্জনও হালাল হয় না। তাহলে আগের প্রশ্নটা আবারো করি - তাদের সংসারটা চলবে কেমন করে?
হাদিসে মোহরানা পরিশোধ বাবদ স্ত্রীকে কোরান শেখানোর ব্যাপারটিকে বৈধ বলা হয়েছে। কোরানের আয়াত পড়ে সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা করা এবং এর বিনিময় নেয়াতেও নবীজি (স.) নিষেধ করেন নি।
এ পর্যন্ত যা আলোচনা করলাম তা হুজুরদের মধ্যে শিক্ষক শ্রেণীর জন্য। এবার আসুন, যে হুজুররা ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য দিয়ে টাকা নেন, সেটাকি জায়েজ? এদের মধ্যে আবার দু রকম আছে।
এক, ওয়াজ করার জন্য তাঁরা কোনো দরদাম করেন না।
দুই, তাকে কত টাকা দেয়া হবে, তার একটা চুক্তি করতে হয়।
আমার মতে প্রথম শ্রেণীর পয়সাটা হাদিয়ার মধ্যে পড়ে। তবে যারা ওয়াজ করে মোটেও নেবেন না, তাঁরা পুরোপুরি কোরান হাদিসের নিরাপত্তার আওতায় আছেন। তাদের বিনিময়টা আল্লাহ পাক পরকালে দেবেন। তবে এ ধরণের আমল করার জন্য ঐ হুজুরদেরকে তাঁদের সংসার নির্বাহের জন্য সক্ষম হতে হবে।
তবে এটাতো মেনে নেবেন যে মাদ্রাসায় পড়ুয়া হুজুরদের বেশিরভাগই একটু গরিব ঘরেরই হয়ে থাকে, যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আছে।
তার মানে মাদ্রাসার শিক্ষকদের সংসার চালানোর জন্য খরচ পাতিরতো দরকার আছে, না কি নাই? আছে। এ কারণে দুনিয়াতেও কিছুটা বিনিময়তো, তাদের ছাত্র ছাত্রী বা সামাজিক সক্ষম লোকদেরকে বহন করতে হবে। আর না হোক, অন্য কোনো কাজ না করে তারা আমাদের ধর্মীয় আমলগুলো পালন করার নিয়মগুলো শিখান। শুধু কি তাই? ইসলামিক অর্থনীতি, ইসলামিক আইন শাস্ত্র সহ ইসলামিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এখন অনেক মাদ্রাসায় উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। কাউকেতো জোর করে এ সকল মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হয় না। স্বেচ্ছায় যারা ভর্তি হয়, তারা নিজেরা যদি এ খরচ বহন করে, তাহলে আমার আপনার মাথা ব্যাথার কারণ কোথায়?
উচ্চ শিক্ষিত কিছু হুজুর বক্তৃতা করে ইসলামিক দাওয়াত কর্মে অংশগ্রহণ করেন। আমাদের দেশে ওনারা বিভিন্ন মাহফিলে বক্তৃতা করেন এবং কেউ কেউ এর বিনিময় নিয়ে থাকেন। এ বিনিময়কেও কোনো কোনো হুজুররা হালাল বলছেন না। যুক্তি আসে যে, এ ওয়াজের মাহফিলগুলোকে কোরানের তাফসীর মাহফিল বলা হয়। যার ফলে কোরান শিখিয়ে বিনিময় নেয়া যাবে না - এ ফতুয়ার আওতায় এ মাহফিলগুলো পড়ে যায়।
তবে বিপক্ষেও যুক্তি আছে। যেমন, যেহেতু ওনারা নিজের পয়সা খরচ করে এবং নিজের সময় ব্যায় করে এ সকল মাহফিলে ওয়াজ করেন, সে কারণে ঐ পরিশ্রম ও সময়ের বিনিময়ে কিছুটা পারিশ্রমিকতো পেতেই পারেন। তবে এটাওতো ঠিক, ওনারা এ কাজের জন্য ডাক্তার উকিলদের মতো চুক্তি করে কোনো পয়সা নেন না। মাহফিলের এন্তেজামিয়া কমিটি যা দেন, তা ই ওনারা নিয়ে থাকেন।
হাদিসে বিনিময় নেয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যদি এ হাদিসগুলো আমরা মেনেও নেই, তাহলে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য হুজুরদের হাদিয়া দিলেতো আর কোনো বিতর্ক থাকে না। আসুন আমরা তাই করি। বেতন নয়। আজ থেকে আমরা হুজুরদেরকে হাদিয়া দেব।
তবে মনে রাখবেন, ইসলাম প্রচার করতেও অর্থের প্রয়োজন হয়। এ কারণে হুজুরদের পয়সার প্রয়োজন রয়েছে।
কিছু কিছু হুজুর ওয়াজ মাহফিলে আসার জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন। ইদানিং এ ব্যাপারটিকে অনেকেই অ-শরীয়তি কাজ বলে আখ্যা দিচ্ছেন। দেখুন ভাই বোনেরা, আমাদের মাননীয় কোনো মন্ত্রীর একই দিনে একাধিক প্রোগ্রাম থাকলে উনিকি গাড়িতে যাতায়াত করে সকল প্রোগ্রামে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন? পারবেন না। এ কারণে উনাকে একটি দ্রুতযানের আশ্রয় নিতেই হবে। হেলিকপ্টারে যে সকল হুজুর মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন, ওনাদের বেলায়ও তাই। এটিকে বিলাসিতা-কর্ম বলে আখ্যায়িত করার পেছনে কোনো যুক্তি নাই।
এ সকল ব্যাপারগুলোকে আমরা যদি এভাবে ভাবি যে, হুজুররাতো আমাদের সমাজেরই মানুষ। আমরা যতটুকু সময় ও শ্রম দিয়ে ইংরেজি বাংলা শিখে শিক্ষিত হয়েছি, হুজুররা তার চাইতেও বেশি শ্রম ও সময় খরচ করে আরবি শিখে হুজুর হয়েছেন। মেধা ভালো না হলে আরবির মতো কঠিন ভাষায় লেখা পড়া করা যায় না। আল্লাহ ও রাসূলের ভালোবাসার কারণে ওনারা হুজুর হয়েছেন। আর বিপরীত দিকে, শুধুমাত্র দুনিয়াবী লাভালাভের কথা বিবেচনায় এনেই আমরা বাংলা ইংরেজি শিক্ষিত লোকরা শিক্ষিত হয়েছি।
এভাবে যদি আমরা ভাবি, তাহলে কেমন হয়? - আমাদের ধর্ম কর্ম শেখার জন্যওতো এই হুজুরদের প্রয়োজন রয়েছে। শুধু দুনিয়ার কথা ভাবলেতো চলবে না। দুনিয়া আখেরাত দুটো জগতেই আমাদের ভালো থাকতে হবে!
আদম আলাইহিসসালাম ও তাঁর পরের অনেক নবীরাই তাদের উম্মতদেরকে ধর্ম কর্ম শেখানোর কাজে নিয়োজিত থাকার কারণে নিজের খাদ্য উপার্জনের জন্য সময় দিতে পারতেন না। তাঁদের ভরণ পোষণের দায়িত্বটা তাদের উম্মতরাই পালন করেছেন। সে ব্যবস্থাটি বিবেচনায় আনেন। তাহলে দেখবেন, হুজুরদের বেতন, হাদিয়া, ইত্যাদি আর্থিক সুবিধাগুলোও হালাল উপার্জনের মধ্যে এসে যাবে।
হুজুরদের খুব কম একটা অংশ পীর হিসেবে মুরিদদেরকে ধর্মীয় আমল শিক্ষা দেন। তবে পীর মুরিদীর ব্যাপারে অনেক বিতর্ক আছে, যদিও পীররা মুরিদদের কাছ থেকে চুক্তিভিত্তিক কোনো পয়সা দাবি করেন না। মুরিদরা পীরকে যা হাদিয়া দেন, পীর সাহেবরা তাই নিয়ে থাকেন। পরকালে পীরের অসীলায় বেহেস্ত পাওয়া যাবে - এটাকে বেশিরভাগ আলেম সমাজ শেরেকীর পর্যায়ে বিবেচনা করেন।
হুজুররাও মানুষ। তাই উনারা ভুল বা পাপের উর্ধে নন। এ কারণে হুজুরদের মধ্যেও অসৎ-পন্থা অবলম্বীনকারী হুজুরও রয়েছে। যেমনটি বাংলা ইংরেজি পড়ুয়া আমাদের মতো শিক্ষিত লোকরাও হান্ড্রেড পার্সেন্ট সৎ নই।
সকল বৈধ পেশার মুসলিম ব্যাক্তিদের সম্মান করার তৌফিক আল্লাহ্পাক আমাদেরকে দান করুন, আমিন!
ভিডিওটি দেখার জন্য আপনাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফিজ। আস্সালামুআলাইকুম।
এই প্রবন্ধে উপস্থাপিত তথ্যসমূহের লিংক: bit.ly/3B0GEmm
Links to information presented in this article: bit.ly/3B0GEmm
Related video link:https://studio.youtube.com/video/5ca1MiEJspo/edit
source web:
No comments